বিনয় : মুমিনের এক অপরিহার্য গুণ-১
২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ এএম
প্রিয় নবীজী (সা.)-এর নবুওতের শুরুর যুগের কথা। মক্কার কুরাইশ কাফেরদের অত্যাচারের মাত্রা যখন দিন দিন কঠোরতর হচ্ছিল, আল্লাহ তাআলা তেমনি এক রাতে আকস্মিকভাবেই রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে গেলেন আরশে আজিমের কাছে। প্রথমে মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস, এরপর সেখান থেকে উপরের দিকে যাত্রা। একেক আসমান অতিক্রম করে, সাত আসমান পেরিয়ে তাঁকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আবার সে রাতেই ফিরে আসেন মক্কায়। এ ঘটনাকে আমরা ‘মেরাজ’ বলে স্মরণ করি। মেরাজ শব্দের অর্থই হলো ঊর্ধ্বারোহণ।
ঘটনাটি সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদিসের আরো বহু গ্রন্থে সবিস্তারে উল্লেখিত হয়েছে। আর পবিত্র কুরআনে এসেছেÑ ‘পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন আলমাসজিদুল হারাম থেকে আলমাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বরকতময়, তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্যে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল, ১)
প্রিয় নবীজী (সা.)-কে মাটির পৃথিবী থেকে সাত আকাশের বাধা অতিক্রম করিয়ে মহান রাব্বুল আলামীন এই যে কাছে নিয়ে গেলেন, এরপর আবার তিনি ফিরেও এলেন এই পৃথিবীতে, জানা কথা, এই সম্মান কেবলই তাঁর। নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন বলে তিনি পরিচিত ‘মূসা কালীমুল্লাহ’ নামে। কিন্তু কথা বলার জন্যে একেবারে কাছে ডেকে নেয়া- এখানে নবী মুহাম্মাদ (সা.) অনন্য। নবী-রাসূলের মহান কাফেলার তিনি সর্দারÑ সায়্যিদুল মুরসালীন ওয়ান নাবিয়্যীন। এ মর্যাদাবানদের মাঝেও তিনি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ।
তাই এ বিরল সম্মান তিনি পেয়েছেন- এটাকে স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেও ধরে নেয়া যায়। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, মানব-ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে তিনি যে বিরল সম্মান পেয়েছেন, সে ঘটনার বর্ণনায় মহান প্রভু তাঁকে কী বলে পরিচয় করাচ্ছেন। উপরের আয়াতেই বিষয়টি স্পষ্ট- পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর ‘বান্দা’কে রজনীতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন ...। এত সম্মান ও মর্যাদা যাকে দিলেন, তাঁর তো অনেক পরিচয়ই ছিল। তিনি আল্লাহর নবী, রাসূল। তিনি নবী-রাসূলগণের সর্দার। তিনি সর্বশেষ নবী।
কিন্তু এসব কিছুই না বলে আল্লাহ তাআলা এ ঘটনায় তাঁর পরিচয় দিচ্ছেন নিজের বান্দা বলে। আল্লাহর যথার্থ বান্দা হতে পারার মাহাত্ম্য এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। বান্দা হওয়ার পরিচয়ে যে যত বেশি সফল, আল্লাহ তাআলার নিকট তার মর্যাদা ততটাই উন্নত। ইবাদত শব্দের অর্থই হলো দাসত্ব ও বন্দেগি। প্রিয় নবীজী (সা.) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দাসত্ব পূর্ণ মাত্রায় সম্পাদন করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি সব সৃষ্টির সেরা, মানব-ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ, আল্লাহর শ্রেষ্ঠ বান্দা।
এ দাসত্বের গুণ যে যতটা বেশি হাসিল করতে পারবে, মহান প্রভুর সামনে সে নিজেকে ততটাই তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র জ্ঞান করবে। নিজেকে এভাবে তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র মনে করার নামই বিনয়। বান্দা খাঁটি মনে বিশ্বাস করবে, আমার যা কৃতিত্ব এর কিছুই আসলে আমার নয়, এসবই আমার প্রতি আমার আল্লাহর দান। আমার যা সম্পদ এগুলো আসলে কিছুই আমার অর্জন নয়, সবই আল্লাহ আমাকে দান করেছেন।
দুনিয়াতে প্রাপ্ত সবকিছুকেই যখন আল্লাহর নিআমত হিসেবে কেউ মেনে নেবে, তখন অনিবার্যভাবেই সে হয়ে উঠবে কৃতজ্ঞ ও বিনয়ী। আল্লাহ তাআলার ইবাদত-বন্দেগিতে যখন বিনয় ও কৃতজ্ঞতার পরশ থাকবে, সব প্রাপ্তিকেই যখন সে কেবলই আল্লাহর দান বলে মেনে নেবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে মুক্ত থাকবে অহংকার ও বড়াই থেকে। অবচেতনভাবেই তার আচার-আচরণ হবে বিনয় ও নম্রতায় পূর্ণ।
এ বিনয় যার যতটা হাসিল হবে, বান্দা হিসেবে সে ততটাই সফল। আল্লাহপাকের বিধিবিধানের সামনে সে ততটাই নিজেকে সঁপে দিতে পারবে। শোকর আর কৃতজ্ঞতায় ততটাই আপ্লæত হবে তার হৃদয়-মন। বাহ্যত নিজের শ্রমে-ঘামে কিংবা অর্থ-মেধায় অর্জিত সফলতাকেও যখন সে আল্লাহর দান বলে বিশ্বাস করবে, তার স্তরে উন্নীত নয় এমন কাউকে দেখে তখন তার মনে অহংকারের পরিবর্তে যোগ হবে কৃতজ্ঞতার এক নতুন মাত্রা। পরম বিনয়ে সে মনে মনে বলবে- সব কৃতজ্ঞতা সেই আল্লাহর, যিনি আমাকে তাঁর অনেক সৃষ্টির ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন।
বাস্তবিক অর্থেই যে নিজেকে এভাবে মিশিয়ে দিতে পারে মাটির সঙ্গে, মাটির পৃথিবীতেই তাকে সম্মানের আসনে বসিয়ে আল্লাহ তাআলা তাকে পুরস্কৃত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুস্পষ্ট ঘোষণা : আল্লাহর জন্যে যে বিনয়ী হয় আল্লাহ তাকে সমুন্নত করেন; তখন সে নিজের চোখে তুচ্ছ হলেও মানুষের চোখে অনেক বড় বিবেচিত হয়। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী : ৭৭৯০)। এ বিনয় যখন কারো হাসিল হবে তখন এর আলামত প্রকাশ পাবে তার ওঠা-বসায় কথা-বার্তায় এমনকি হাঁটা-চলায়ও।
আল্লাহ তাআলার প্রকৃত সেই বান্দাদের বৈশিষ্ট্যাবলি পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখিত হয়েছে : ‘রাহমান’-এর বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে... । (সূরা ফুরকান, ৬৩) আরেক আয়াতে হাঁটাচলায়ও বিনয়-নম্রতার আদেশ করা হয়েছে এভাবে : ভ‚পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভ‚পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বতপ্রমাণ হতে পারবে না। (সূরা বনী ইসরাঈল, ৩৭)।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ